হাইকোর্টের নির্দেশ: আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন
- By Jamini Roy --
- 19 November, 2024
বাংলাদেশ হাইকোর্ট আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা করতে উচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) এই আদেশ দেন। আদানির সঙ্গে করা সব চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে চুক্তিগুলো দেশের স্বার্থবিরোধী কি না, তা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।
আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এক মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটি গঠনের পর দুই মাসের মধ্যে তাদের বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। বিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে আদানির সঙ্গে চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের জন্য জনস্বার্থে দায়ের করা একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে এই নির্দেশনা আসে।
৬ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী বিদ্যুৎ নিয়ে আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা চুক্তি বাতিল চেয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। এতে বলা হয়, বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটি একতরফা এবং দেশের স্বার্থবিরোধী। লিগ্যাল নোটিশে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল, তবে সময়সীমা শেষ হওয়ার পরই রিট দায়ের করা হয়।
১৩ নভেম্বর এই রিটটি হাইকোর্টে গ্রহণ করা হয়। এতে চুক্তি বাতিল বা পুনর্মূল্যায়নের জন্য বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পর্যালোচনা করার দাবি জানানো হয়।
২০১৭ সালে তাড়াহুড়ো করে আদানি গ্রুপের সঙ্গে একটি ২৫ বছরের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করা হয়। ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ১,৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মতে, এই বিদ্যুৎ কেনার খরচ ইউনিটপ্রতি ১২ টাকা, যা ভারতের অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ৬৩ শতাংশ বেশি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, আদানি থেকে বিদ্যুৎ কেনার খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেশি। পাশাপাশি আদানি চুক্তির স্বচ্ছতা ও প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনায় চলতি বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর ১১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রও এর অন্তর্ভুক্ত।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আদানি বিদ্যুৎ চুক্তির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যদি চুক্তির কোনো শর্ত বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়, তাহলে তা বাতিল বা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে চলমান বিতর্ক এবং হাইকোর্টের নির্দেশ দেশের বিদ্যুৎ খাতের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ পর্যালোচনা দেশের জ্বালানি নীতিতে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে।